করোনায় কক্সবাজারে ৬ রোহিঙ্গাসহ মৃত্যু ৭১, আক্রান্ত ৪২০৯

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৭ আগস্ট পর্যন্ত ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারমধ্যে, ৬৫ জন স্থানীয় নাগরিক ও ৬ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী। আক্রান্তের তলনায় মৃত্যুর হার ১’৭০% ভাগ। কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান মতে, ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মোট ৪২০৯ জন। তারমধ্যে, স্থানীয় নাগরিক ৪০৭০ জন এবং রোহিঙ্গা শরনার্থী ১৩৯ জন। আবার রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মধ্যে উখিয়া উপজেলায় ১১৬ জন ও টেকনাফ উপজেলায় ২৩ জন। পুরাতন করোনা রোগীর ফলোআপ টেস্টে পর্যন্ত মোট ২৩৭ জনের রিপোর্টও ‘পজেটিভ’ এসেছে। তারমধ্যে, পুরাতন আক্রান্ত ৬ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীর ফলোআপ টেস্ট রিপোর্ট পজেটিভ পাওয়া যায়।

রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ২৬ জুন থেকে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে ৩৪ টি রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে মোট ১লক্ষ ৭৯হাজার ৫৯১ টি পরিবারে ৮লক্ষ ১৯ হাজার ৭৮৭ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। যারা সব মিলিয়ে মাত্র ৬ হাজার ৫ শত একর ভূমিতে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন। বিস্ময়কর বিষয় হলো, ছোট্ট জায়গায় এই বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরনার্থী বসবাস করেও করোনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে আকাশ ছোঁয়া সাফল্য এসেছে। কোভিড-১৯ সংক্রামনে কঠিন পরিস্থিতিতেও ৩৪ টি ক্যাম্পে প্রায় সোয়া ৮ লক্ষ রোহিঙ্গাকে সরকারি ও ডাব্লিউএইসও এর সকল স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ ও মানাতে পেরেছে। কক্সবাজার আরআরআরসি অফিস থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছিলো বহুমুখী জরুরি বিভিন্ন পদক্ষেপ। যার ফলে গত ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ১৩৯ জন রোহিঙ্গা। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে মাত্র ৬ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী।

৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ২০৪৬ জন রোগী নিয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা শীর্ষে অবস্থান করছে। ৪২৪ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী নিয়ে উখিয়া উপজেলা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ৪২১ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী নিয়ে চকরিয়া উপজেলা তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে, ৩৩৩ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী নিয়ে টেকনাফ উপজেলা চতুর্থ অবস্থানে, ৩২৯ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী নিয়ে রামু উপজেলা পঞ্চম অবস্থানে, ২৬০ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী নিয়ে মহেশখালী উপজেলা ষষ্ঠ অবস্থানে, ১৬৬ জন করোনা রোগী নিয়ে পেকুয়া উপজেলা সপ্তম অবস্থানে এবং কুতুবদিয়া উপজেলা ৯১ জন করোনা রোগী নিয়ে ৮টি উপজেলার মধ্যে সর্বনিম্মে অবস্থান করছে। তবে মাত্র প্রায় দেড় লক্ষ জনসংখ্যা অনুপাতে কুতুবদিয়া উপজেলায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একেবারে কমও নয়। কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. সাঈকা হক প্রণীত ম্যাপিং থেকে এ তথ্য জানা যায়।

৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করোনা ভাইরাস এর নমুনা টেস্ট করা হয়েছে মোট ৩৬৮৪১ জনের। তারমধ্যে-স্থানীয় নাগরিকের নমুনা ২৪৯৬৪ জনের, রোহিঙ্গা শরনার্থীর নমুনা ৬১৮১ জনের, বান্দরবান জেলার নাগরিকের নমুনা ৪৩৪১ জনের এবং চট্টগ্রাম জেলার নাগরিকের নমুনা ১৩৫০ জনের।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫৪৪ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৮৪’৮৫% ভাগ। একইসময়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ৪৪৯ জন হোম আইসোলেশনে এবং ৮৮ জন প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

৭ সেপ্টেম্বরের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল :

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে সোমবার ৭ সেপ্টেম্বর ৪৬৩ জনের স্যাম্পল টেস্টের মধ্যে ৩৮ জনের রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ আসে। তারমধ্যে, কক্সবাজার জেলায় ২৪জন, বান্দরবান জেলায় ৩ জন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় ১জন, সাতকানিয়া উপজেলায় ১ জন, ৮ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী ও আগে করোনা আক্রান্ত হওয়া ১জন পুরাতন রোগীর ফলোআপ টেস্ট রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ পাওয়া যায়।

একইদিন বাকী ৪২৫ জনের স্যাম্পল টেস্টের রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ পাওয়া আসে।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কক্সবাজার জেলায় করোনা ‘পজেটিভ’ রিপোর্ট পাওয়া ২৪ জনের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১৩জন, চকরিয়া উপজেলায় ২জন, রামু উপজেলায় ১জন, উখিয়া উপজেলায় ২জন, টেকনাফ উপজেলায় ৩জন, পেকুয়া উপজেলায় ১ জন, কুতুবদিয়া উপজেলায় ১জন ও মহেশখালী উপজেলায় ১ জন ।

এনিয়ে, কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট ৪২০৯ জনে পৌঁছেছে।